মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।মধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হলঃ
শক্তি প্রদায়ী
মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
হজমে সহায়তা
এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়
মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
অনিদ্রায়
মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।
যৌন দুর্বলতায়
পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
প্রশান্তিদায়ক পানীয়
হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
পাকস্থলীর সুস্থতায়
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
দেহে তাপ উৎপাদনে
শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
পানিশূন্যতায়
ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
রূপচর্চায়
মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহূত হয়।
ওজন কমাতে
মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে,মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।
হজমে সহায়তা
মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে।
গলার স্বর
গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে।
তারুণ্য বজায় রাখতে
তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।
হাড় ও দাঁত গঠনে
মধুর গুরুত্বপূর্ণউপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়ে
পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে।
হাঁপানি রোধে
আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
দু চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায় ।প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত ।
রক্ত পরিষ্কারক
এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রন খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে।
রক্ত উৎপাদনে সহায়তা
রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
হৃদরোগে
এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও যোগান দেয়।মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকর।বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।
জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ব্যথা নিরাময়ে
আপনার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা? প্রচুর বাতের ওষুধ খেয়েও কোনো ফল পাননি? মধু খান। যে অবাঞ্ছিত রসের কারণে শরীরে বাতব্যামোর জন্ম, সে রস অপসারিত করবে মধু। আপনার বাত সেরে যাবে।
গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি
হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু।একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে।
মধু খেলে বুদ্ধি বাড়ে
মধু যে শুধু কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয়। আপনি প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক চামচ মধু খাবেন, ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য করে ফলে আপনার মস্তিষ্কের শক্তি তথা বুদ্ধির জোর বেড়ে যাবে। যে কোনো কাজেকর্মে আপনার মগজ আগের চেয়ে বেশি খেলবে। যাদের মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু এনে দেবে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা। মনে রাখবেন, আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু জেগে থাকে। সুতরাং তখনও তার শক্তি দরকার। আর এ শক্তির ভালোই যোগান দেয় মৌমাছির চাক ভেঙে পাওয়া এই প্রাকৃতিক মধু। আপনার লিভারে মধু থেকে পাওয়া ফলজ শর্করা বা ফ্রুকটোজ নামের পদার্থটিই মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেই কাজ করে থাকে।মানুষের লিভারে শক্তি সংরক্ষণ করে এবং রাতব্যাপি মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
ঠান্ডা দূর করে মধু
মধু নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার প্রবণতা দূর হবে। চা, কফি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলাব্যথায়,টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া,জিহ্বার ঘা (ঠান্ডাজনিত) ভালো হয়।
সমপরিমাণ আদারস এবং মধুর মিশ্রণ কাশির সাহায্যে শ্লেষ্মা বের করে ফেলার একটি সহায়ক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ঠান্ডা, কাশি, কণ্ঠনালির ক্ষত, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দেয়।
পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকর।মধুর এই ঠাণ্ডাজনিত রোগনিরোধী গুণের কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়,যা কবিরাজি মতে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত।
শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে
শিশুদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে অল্প করে (তিন-চার ফোঁটা) মধু নিয়মিত খাওয়ানো উচিত। এতে তাদের পুরো দেহের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ভালো হবে। তবে শিশুকে মধু নিয়মিত খাওয়াতে হবে ঠান্ডা ঋতুতে, গরমের সময় নয়।শিশুদের দুর্বলতা দূর করার জন্যমধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাস।বড়দের তুলনায় বাড়ন্ত শিশুদের (বিশেষ করে যারা স্কুলে যায়) জন্য পরিমাণে মধু বেশি প্রয়োজন।
আয়ু বৃদ্ধি
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত মধু ও সুষম খাবারে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ হয়েবেঁচে থাকে।
ক্ষত সারাতে মধু
উপকারী।প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী।
আজকাল ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারাতেও মধুর ব্যবহারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শোন ব্লেয়ার বলেছেন, ক্ষতে ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতেও ড্রেসিংয়ের সময় মধু মেশানো উচিত।
ধরুন, আপনার শরীরের কোন অংশ কেটে গেল হাতের কাছে এ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট নেই। এবার বিকল্প হিসাবে আপনার ঘরের মধুটি আপনার কাজে আসতে পারে। মধু ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণকেও ঠেকায়। এভাবে মধু আপনার ক্ষতে ইনফেকশন হতে দেবে না এবং ক্ষতটি ও দ্রুত সারিয়ে তুলবে। মধুর এমন মধুরতম ব্যবহার আর কি হতে পারে?
কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করবেন? এটা এবার জেনে নিন। প্রথমে ক্ষত স্থনটি ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর আলতো করে সেখানে পাস্তুরিত মধু লাগিয়ে নিন। এবার ব্যান্ডেজ দিয়ে জায়গাটা বেঁধে নিন। ব্যস, এভাবে দিনে তিনবার। ক্ষত সেরে যাবে।
তাছাড়া দেহের ক্ষত এবং ফোঁড়ার ওপর মধু এবং চিনি চমৎকার কাজ করে থাকে। এটি যে কোনো ব্যথাকে প্রশমিত করে এবং জীবাণুনাশকের কাজ করে।
মধু বনাম চিনি
একজন মানুষের জন্য দৈনিক যত ক্যালরি খাদ্য দরকার, তার ২২ ক্যালরি পাওয়া যায় এক চা চামচ মধুতে। একই পরিমাণ চিনিতে পাওয়া যাবে ১৫ ক্যালরি। তবু এক কেজি চিনির চেয়ে এক কেজি মধুর দাম অনেক বেশি। কারণ, চিনি যতটা সহজলভ্য মধু ততটা নয়। অবশ্য মধু চিনির চেয়ে দুষ্প্রাপ্য বলেই যে এর দাম বেশি, তাও নয়। আসলে চিনির চেয়ে মধুর দ্রব্যগুণটা মানব শরীরে অনেক বেশি সক্রিয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মধুর কাছে কারখানায় তৈরি চিনি তেমন পাত্তা পায় না। খাদ্যবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মধুতে রয়েছে প্রচুর গ্লুকোজ আর ফলজ শর্করা। এটি দিয়ে লিভারে সঞ্চিত হয় প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন। আর এতে শরীরে পাওয়া যায় অমিত শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য।
মধুর দানাদার সমস্যা
অনেক মধু দানাদার আকার ধারণ করে। যদি কোনো মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ ফ্রুক্টোজের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে মধু অতি দ্রুত দানাদার হয়। যেমন সরিষা ফুলের মধু। আবার মধুতে পর্যাপ্ত পোলেন, ধুলাবালি ও বুদবুদ থাকলে সে মধু সহজে দানাদার হয়। সাধারণত ১১ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মধু জমতে পারে। তবে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মধু অতি দ্রুত জমতে সহায়ক। পানির পরিমাণ বেশি থাকলে মধুকে দানাদার হতে ত্বরান্বিত করবে। তবে দানাদার মধু খেতে কোনো সমস্যা নেই। দানাদার মধুকে পরোক্ষ তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরল করা যায় বা কৃম মধুতে রূপান্তর করা যায়। দানাদার মধু ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উত্তম।
সতর্কতা
মধু সব রোগের মহৌষধ হলেও একটি কথা থেকেই যায়, সেটি হলো ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মধু খুবই বিপজ্জনক। কারণ এটি রক্তে সরাসরি শোষিত হয় বলে সহজেই দেহের রক্ত শর্করাকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু গ্রহণ নিষেধ।
তাছাড়া মধু সবার শরীরে গরম তৈরি করে। যেকোনো বয়সের মানুষ অধিক পুষ্টির আশায় বেশিমধু খেলে ডায়রিয়া হয়ে যাবে
শক্তি প্রদায়ী
মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
হজমে সহায়তা
এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়
মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে
বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
অনিদ্রায়
মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।
যৌন দুর্বলতায়
পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
প্রশান্তিদায়ক পানীয়
হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
পাকস্থলীর সুস্থতায়
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
দেহে তাপ উৎপাদনে
শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
পানিশূন্যতায়
ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
রূপচর্চায়
মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহূত হয়।
ওজন কমাতে
মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে,মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।
হজমে সহায়তা
মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে।
গলার স্বর
গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে।
তারুণ্য বজায় রাখতে
তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।
হাড় ও দাঁত গঠনে
মধুর গুরুত্বপূর্ণউপকরণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়ে
পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে।
হাঁপানি রোধে
আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
দু চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায় ।প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত ।
রক্ত পরিষ্কারক
এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রন খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে।
রক্ত উৎপাদনে সহায়তা
রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
হৃদরোগে
এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও যোগান দেয়।মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু অত্যন্ত কার্যকর।বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।
জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ব্যথা নিরাময়ে
আপনার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা? প্রচুর বাতের ওষুধ খেয়েও কোনো ফল পাননি? মধু খান। যে অবাঞ্ছিত রসের কারণে শরীরে বাতব্যামোর জন্ম, সে রস অপসারিত করবে মধু। আপনার বাত সেরে যাবে।
গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি
হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু।একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে।
মধু খেলে বুদ্ধি বাড়ে
মধু যে শুধু কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয়। আপনি প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক চামচ মধু খাবেন, ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য করে ফলে আপনার মস্তিষ্কের শক্তি তথা বুদ্ধির জোর বেড়ে যাবে। যে কোনো কাজেকর্মে আপনার মগজ আগের চেয়ে বেশি খেলবে। যাদের মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু এনে দেবে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা। মনে রাখবেন, আপনি ঘুমিয়ে পড়লেও আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু জেগে থাকে। সুতরাং তখনও তার শক্তি দরকার। আর এ শক্তির ভালোই যোগান দেয় মৌমাছির চাক ভেঙে পাওয়া এই প্রাকৃতিক মধু। আপনার লিভারে মধু থেকে পাওয়া ফলজ শর্করা বা ফ্রুকটোজ নামের পদার্থটিই মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবেই কাজ করে থাকে।মানুষের লিভারে শক্তি সংরক্ষণ করে এবং রাতব্যাপি মস্তিষ্কে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
ঠান্ডা দূর করে মধু
মধু নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার প্রবণতা দূর হবে। চা, কফি ও গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলাব্যথায়,টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া,জিহ্বার ঘা (ঠান্ডাজনিত) ভালো হয়।
সমপরিমাণ আদারস এবং মধুর মিশ্রণ কাশির সাহায্যে শ্লেষ্মা বের করে ফেলার একটি সহায়ক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ঠান্ডা, কাশি, কণ্ঠনালির ক্ষত, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দেয়।
পেনসিলভানিয়া স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক চামচ মধু বিভিন্ন সর্দির ওষুধ থেকেও অনেক বেশি কার্যকর।মধুর এই ঠাণ্ডাজনিত রোগনিরোধী গুণের কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়,যা কবিরাজি মতে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত।
শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে
শিশুদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে অল্প করে (তিন-চার ফোঁটা) মধু নিয়মিত খাওয়ানো উচিত। এতে তাদের পুরো দেহের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ভালো হবে। তবে শিশুকে মধু নিয়মিত খাওয়াতে হবে ঠান্ডা ঋতুতে, গরমের সময় নয়।শিশুদের দুর্বলতা দূর করার জন্যমধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাস।বড়দের তুলনায় বাড়ন্ত শিশুদের (বিশেষ করে যারা স্কুলে যায়) জন্য পরিমাণে মধু বেশি প্রয়োজন।
আয়ু বৃদ্ধি
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত মধু ও সুষম খাবারে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ হয়েবেঁচে থাকে।
ক্ষত সারাতে মধু
উপকারী।প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী।
আজকাল ছোটখাটো কাটাছেঁড়া সারাতেও মধুর ব্যবহারের কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শোন ব্লেয়ার বলেছেন, ক্ষতে ইনফেকশন সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতেও ড্রেসিংয়ের সময় মধু মেশানো উচিত।
ধরুন, আপনার শরীরের কোন অংশ কেটে গেল হাতের কাছে এ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট নেই। এবার বিকল্প হিসাবে আপনার ঘরের মধুটি আপনার কাজে আসতে পারে। মধু ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণকেও ঠেকায়। এভাবে মধু আপনার ক্ষতে ইনফেকশন হতে দেবে না এবং ক্ষতটি ও দ্রুত সারিয়ে তুলবে। মধুর এমন মধুরতম ব্যবহার আর কি হতে পারে?
কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করবেন? এটা এবার জেনে নিন। প্রথমে ক্ষত স্থনটি ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর আলতো করে সেখানে পাস্তুরিত মধু লাগিয়ে নিন। এবার ব্যান্ডেজ দিয়ে জায়গাটা বেঁধে নিন। ব্যস, এভাবে দিনে তিনবার। ক্ষত সেরে যাবে।
তাছাড়া দেহের ক্ষত এবং ফোঁড়ার ওপর মধু এবং চিনি চমৎকার কাজ করে থাকে। এটি যে কোনো ব্যথাকে প্রশমিত করে এবং জীবাণুনাশকের কাজ করে।
মধু বনাম চিনি
একজন মানুষের জন্য দৈনিক যত ক্যালরি খাদ্য দরকার, তার ২২ ক্যালরি পাওয়া যায় এক চা চামচ মধুতে। একই পরিমাণ চিনিতে পাওয়া যাবে ১৫ ক্যালরি। তবু এক কেজি চিনির চেয়ে এক কেজি মধুর দাম অনেক বেশি। কারণ, চিনি যতটা সহজলভ্য মধু ততটা নয়। অবশ্য মধু চিনির চেয়ে দুষ্প্রাপ্য বলেই যে এর দাম বেশি, তাও নয়। আসলে চিনির চেয়ে মধুর দ্রব্যগুণটা মানব শরীরে অনেক বেশি সক্রিয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মধুর কাছে কারখানায় তৈরি চিনি তেমন পাত্তা পায় না। খাদ্যবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মধুতে রয়েছে প্রচুর গ্লুকোজ আর ফলজ শর্করা। এটি দিয়ে লিভারে সঞ্চিত হয় প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন। আর এতে শরীরে পাওয়া যায় অমিত শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য।
মধুর দানাদার সমস্যা
অনেক মধু দানাদার আকার ধারণ করে। যদি কোনো মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ ফ্রুক্টোজের চেয়ে বেশি থাকে তখন সে মধু অতি দ্রুত দানাদার হয়। যেমন সরিষা ফুলের মধু। আবার মধুতে পর্যাপ্ত পোলেন, ধুলাবালি ও বুদবুদ থাকলে সে মধু সহজে দানাদার হয়। সাধারণত ১১ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মধু জমতে পারে। তবে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মধু অতি দ্রুত জমতে সহায়ক। পানির পরিমাণ বেশি থাকলে মধুকে দানাদার হতে ত্বরান্বিত করবে। তবে দানাদার মধু খেতে কোনো সমস্যা নেই। দানাদার মধুকে পরোক্ষ তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরল করা যায় বা কৃম মধুতে রূপান্তর করা যায়। দানাদার মধু ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহার করা উত্তম।
সতর্কতা
মধু সব রোগের মহৌষধ হলেও একটি কথা থেকেই যায়, সেটি হলো ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মধু খুবই বিপজ্জনক। কারণ এটি রক্তে সরাসরি শোষিত হয় বলে সহজেই দেহের রক্ত শর্করাকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু গ্রহণ নিষেধ।
তাছাড়া মধু সবার শরীরে গরম তৈরি করে। যেকোনো বয়সের মানুষ অধিক পুষ্টির আশায় বেশিমধু খেলে ডায়রিয়া হয়ে যাবে
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.